October 10, 2024, 6:22 pm

সংবাদ শিরোনাম
বাংলাদেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা সংশোধন করিতে হবে – পর্ব ৯ আসন্ন শারদীয়া দুর্গাপূজা শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রশাসন ও জনগণের প্রীতি আহ্বান – পর্ব ৮ প্রশাসন সংস্থা ব্রিটিশ আইনের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থা চলতে পারে না-পর্ব ৭ মাতৃভূমির এক ইঞ্চি জমি ছাড় দেওয়া হবে না, পর্ব ৬ স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমি রক্ষা করতে হলে প্রতিটি ঘরে সেনাবাহিনী তৈরি করতে হবে(পর্ব-৫) আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জামায়াত নেতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিনের স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হলে সশস্ত্র ট্রেনিং এর প্রয়োজন। বৈষম্য বিরোধী অভিভাবক ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কমিটির (পর্ব- ৪) ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে গড়তে হলে সংস্কার প্রয়োজন=== বৈষম্য বিরোধী অভিভাব ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে অদ্ভুতুরে কাণ্ডকীর্তি

ভয়ঙ্কর সব অপরাধে জড়িত হাজার হাজার বিদেশী নাগরিক এদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে

ভয়ঙ্কর সব অপরাধে জড়িত হাজার হাজার বিদেশী নাগরিক এদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

ভয়ঙ্কর সব অপরাধে জড়িত হাজার হাজার বিদেশী নাগরিক এদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ২০টি দেশের ৫ হাজারেরও বেশি নাগরিক খুন, অস্ত্র, মাদক, জালমুদ্রা, জঙ্গি তৎপরতা, আদম পাচার, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতিসহ নানা ভয়ঙ্কর অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। ওসব বিদেশী নাগরিকদের অনেকেই নিজ দেশের নাম ঠিকানা পাল্টে এদেশে এসে আত্মগোপন করে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। খোদ রাজধানী ঢাকা বিদেশী অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হওয়ার উপক্রম। রাজধানীর গুলশান-বনানী-বারিধারা কূটনৈতিক এলাকা থেকে শুরু করে উত্তরা পর্যন্ত অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। বৈধ কোন কাগজপত্র ছাড়াই তারা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বসবাস করে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদেশী নাগরিকদের অনেকেই ছাত্র ও ভ্রমণ ভিসায় এ দেশে এসে অপরাধী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে। উত্তরা ও গুলশানসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় তারা বাসা ভাড়া করে থাকে। এক সময় ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তারা এ দেশে অবৈধভাবে থাকতে শুরু করে, যা বড় ধরনের অপরাধ। তাছাড়া তারা অনেক সময় মাদক ও জাল টাকা তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ইতিপূর্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রামপুরার বনশ্রী থেকে ১১, গুলশান থেকে ৪ ও উত্তরা থেকে ১৬ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিদেশী অপরাধীদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত হয়েছে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশী অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য খুব শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

সূত্র জানায়, গত ২৭ জুন রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নতুন মাদক আইসসহ (ক্রিস্টাল মিথাইল এমফিটামিন) এক নাইজিরীয় নাগরিককে আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। রাজধানীর ভাটারা থানাধীন একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করার সময় তার কাছ থেকে ৫২২ গ্রাম নতুন মাদক আইস উদ্ধার করা হয়। এ মাদক ইয়াবার চেয়েও ভয়াবহ ধরনের মরণনেশা। নতুন মাদক আইস এনে ধরা পড়ার পর এদেশে বিদেশী অপরাধীদের নতুন ধরনের অপরাধের মাত্রা যুক্ত হয়। তাছাড়া গত ১ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা এলাকার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ থেকে জালিয়াতি করে অর্থ তুলে নেয়ার সময় ইউক্রেনের এক নাগরিককে আটক করে বুথের নিরাপত্তাকর্মী। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতে রাজধানীর পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনে অভিযান চালিয়ে আরন্ ৫ ইউক্রেনীয়কে গ্রেফতার করা হয়। ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশে আসা এমনই এক ইউক্রেনীয় জালিয়াত চক্রকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। জালিয়াতি চক্রের সদস্য ইউক্রেনের ৬ নাগরিককে আদালতে সোপর্দ করার পর তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিদেশী অপরাধীদের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

সূত্র আরো জানায়, গত বছর ডিসেম্বরে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি ও জাল ডলার এবং জালিয়াতির অপরাধে জড়িত কয়েকজন বিদেশী নাগরিক ধরতে রাজধানীর রামপুরা, গুলশান ও উত্তরার ১৪৭টি বাড়িতে একযোগে অভিযান চালানো হয়। কাগজপত্র ছাড়া অপরাধে জড়িত এমন ৩১ জনকে আটক করে পুলিশ। তারা সবাই আফ্রিকান। গ্রেফতারকৃত বিদেশীদের বাসা ভাড়া দেয়ার বিষয়ে বাড়িওয়ালাদের কাছে বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। বৈধ কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পরই তাদের ভাড়া না দেয়ার কারণে নির্দোষ বাড়িওয়ালারাও ফেঁসে যায়। গ্রেফতার হওয়া ৩১ বিদেশী নাগরিকও কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। শিক্ষার্থী ও ভ্রমণ ভিসায় তারা বাংলাদেশে এসেছে। তারা সবাই আফ্রিকান নাগরিক। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকরা খুন, প্রতারণা, মাদক ব্যবসা, জাল টাকা তৈরি, ভিওআইপি ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছিল নাইজিরিয়ার ১২, উগান্ডার ৫, ক্যামেরুনের ৪, গাম্বিয়ার ৩, আইভোরি কোস্টের ২, সেনেগালের ১, কেনিয়ার ১, মালির ১, মোজাম্বিকের ১ ও টোগোর ১ জন। তাছাড়া গত বছর ৪ অক্টোবর অবৈধভাবে বসবাসকারী আলজিরীয় নাগরিক আবু ওবায়েদ কাদের সমকামিতায় ব্যর্থ হয়ে পানিতে চুবিয়ে উত্তরায় স্কুলছাত্র জুবায়ের আহমদকে হত্যা করে। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর কাদের এই বর্ণনা দেয়। ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড ক্যামেরুনের ৩ নাগরিক পেরেজ ইফরেইন, সেন কেরিন ন্যাটি ও মিকো স্যান্ডিও নাটালিকে সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা থেকে জাল ডলার ও ডলার তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করে ডিবি। সেগুনবাগিচা থেকে বোমা তৈরির ম্যানুয়ালসহ গ্রেফতার করা হয় জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান অব পাকিস্তান-এর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তিন পাকিস্তানী মেহমুদ, উসমান ও ফকরুলকে। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি জাল ডলার, ইউরো, রূপিসহ গুলশানের নিকেতন থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক জিংগে ফিলিং সিফু, ক্যামেরুনের সামজেলা ক্রিসসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করে ডিবি। একই বছরের ১১ জুন কাওরান বাজার হোটেল লা-ভিঞ্চি থেকে সোয়া ৩ কেজি কোকেনসহ জুয়ান পাবলো রেফায়েল নামে পেরুর এক নাগরিক এবং ৩ সেপ্টেম্বর উত্তরা থেকে মদসহ কামারা কাডে, কোনজি লোভেনিয়া এবং রবার্টো মিলি মনোনো নামে গিনি ও দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিককে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। গত ২২ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে অবৈধ বিপুল ভিওআইপি সরঞ্জামসহ চীন ও তাইওয়ানের ৩৭ নাগরিককে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর আগে ১৮ এপ্রিল সাভারে একটি রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পেরুর নাগরিক ব্রিট জে লুডাভিগসেন শাকাতা ও ভারতের স্যাম্পাত কুমারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে এসে বিদেশী নাগরিকরা অপরাধ করার প্রবণতা দিন দিনই বেড়ে যাচ্ছে। বিদেশী নাগরিক বলে স্পর্শকাতর বিষয়টি অনেক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এড়িয়ে চলে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অভিযানও পরিচালিত হয় না। বিদেশী অপরাধীরা বাংলাদেশে এসে দেশীয় লোকজনকেও প্রলোভনের টোপে ফেলে অপরাধী বানিয়ে ফেলার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন জানান, অন্তত ২০ দেশের কমপক্ষে ৫ সহস্রাধিক নাগরিক রাজধানী ঢাকায় ভয়ঙ্কর সব অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে শতাধিক রয়েছে যারা নিজ দেশের দাগি অপরাধী। নাম-ঠিকানা পাল্টে বাংলাদেশে আত্মগোপনে থেকে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন তাদের অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে অপরাধে জড়িত বিদেশী নাগরিকদের ধরতে অভিযান শুরু করবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর